এবারের এইচএসসি পরিক্ষায় চরম ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে উখিয়া কলেজে। এমনকি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কেউ পাস করেনি। রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কলেজ ব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করছেন অনেকে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ৫৭০ জন পরিক্ষার্থীদের মাঝে অকৃতকার্য হয়েছে ৩৯৮ জন এবং পাশ করেছেন মাত্র ১৭২ জন। পাশের হার ৩০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
উখিয়া কলেজে মানবিক বিভাগ থেকে পাশ করেছে ১শ ৪০ জন, ফেল করেছে ৩শ ৩৬জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পাশ করেছে ৩২জন, ফেল-৭০ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬ জন অংশ নিয়ে কেউ পাশ করেনি।
উখিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অজিত দাশ এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ে তিনি নিজেই লজ্জিত বলে জানান। শিক্ষার্থীরা কলেজে অনুপস্থিত, ক্লাসে পাঠদানে অংশগ্রহণ না করা ও সর্বোপুরি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করার কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরো জানান, সাধারণে খারাপ করলেও ৮৪ জন কারিগরি শিক্ষা পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাশ করেছে। তার মতে, সাধারণ ও কারিগরি শাখায় মোট পাশের হার ৩৯.৫৪।
সচেতন অভিভাবক মনে করেন কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, সঠিক পরিচালনা ও শিক্ষকদের জবাবদিহিতা না থাকায় ফলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগে ৫ জন শিক্ষক থাকার পরও ৬ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে অংশগ্রহণ করে সবাই ফেল করেছে। এরা কি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আদৌ কাজ করেছিল। নাকি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অযোগ্যতা প্রমাণ করে।
উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দে মনে করছেন, ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে কলেজে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি,শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবকদের আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের এনজিওর চাকরি বিষয়ে যেসব মন্তব্য করা হচ্ছে তা যুক্তিযুক্ত নয় দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে এসএসসি পাশ কোনো ছেলেকে চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই। কমপক্ষে এইচএসসি পাশ করতে হয়। পাশ না করার আগে এনজিও কে দোষারোপ করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।
ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে সচেতন অভিভাবকদের অভিমত, এলাকায় লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী অবস্থান করার ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও সংস্থায় স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের মাঝে অদ্যাবধি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এনজিওদের কাছ থেকে মাস শেষে ৩০-৪০হাজার থেকে শুরু করে ৫০-৬০হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন গ্রহণ করছেন। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে, চাকরীর কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের ফলে মারাত্মক ফল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এবং অভিভাবকরাও অর্থের লোভে পড়ে নিজ নিজ সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব থেকে সরে আসার কারণে ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে।
পাঠকের মতামত